সাইবার ঝুকি ও আজকের প্রজন্ম
আজকের প্রজন্ম ইন্টারনেট ছাড়া জীবনযাপনের কথা ভাবতেই পারে না। মোটামুটিভাবে ১৯৮০ সালের আশেপাশে যাদের জন্ম, তারাই প্রথম ই-মেল এবং ইন্টারনেট জেনারেশন। এরা ‘গুগল’ সার্চ ইঞ্জিনকে চোখের সামনে জন্মাতে দেখেছেন। ‘অরকুট’ ছাড়িয়ে ‘ফেসবুক’, ‘ফেসবুক’ থেকে ‘হাইক মেসেঞ্জার’— এই প্রজন্ম প্রত্যেক মুহূর্তেই নিজেকে আপডেট করে চলেছে। কিন্তু যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে এঁরাই কিন্তু আজ সবচেয়ে বেশি বিপদের মুখোমুখি।
সাইবার অপরাধের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার সরকার আলাদা সাইবার সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে।
একটি সমীক্ষা |
‘ওয়ানাক্রাই’ নামে ছড়িয়ে পড়া র্যানসামওয়্যার ভাইরাসে ইংল্যান্ড, স্পেন, ফ্রান্স, রাশিয়া এবং চীনসহ বিশ্বের ১শ’টি দেশের দু’লাখের বেশি কম্পিউটার আক্রান্ত হয়েছে। ইংল্যান্ডে স্বাস্থ্যখাতে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। সেখানে রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা ন্যাশনাল হেলথকেয়ার সার্ভিসেস (এনএইচএস)-এর অধীনে থাকা ৪৮টি ট্রাস্ট এবং স্কটল্যান্ডে ১৩টি এনএইচএস-ভুক্ত প্রতিষ্ঠান সাইবার হামলার শিকার হয়। এতে অনেক হাসপাতাল সার্জারিসহ বিভিন্ন চিকিৎসা ব্যবস্থা বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
সম্প্রতি ‘নর্টন সাইবার সিকিউরিটি ইনসাইট’ শীর্ষক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সিমান্টেক। এই রিপোর্টেই বলা হচ্ছে ১৯৮০-২০০০ সালের মধ্যে যাদের জন্ম, সেই মিলেনিয়াল প্রজন্মের মধ্যে নিজেদের পাসওয়র্ড অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করার প্রবণতা অত্যন্ত বেশি। গত বছর এই প্রজন্মের ৫৫ শতাংশ ভারতীয় সাইবার ক্রাইমের কবলে পড়েছেন। সিমান্টেকের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ট্রেন্ড শুধুই এদেশের নয়। সারা পৃথিবীতেই মিলেনিয়াল প্রজন্মের ৪০ শতাংশ সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছে এবং ভারতীয়দের ক্ষেত্রে পাসওয়র্ড শেয়ার করার প্রবণতাই এর মূল কারণ।
সিমান্টেকের রিপোর্ট অনুযায়ী, ৩৪ শতাংশ মিলেনিয়াল ভারতীয় তাদের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের পাসওয়র্ড অন্যদের জানিয়েছেন এবং গত এক বছরে তাদের মধ্যে বেশিরভাগের থেকেই ব্ল্যাকমেল করে টাকা চাওয়া হয়েছে। ভারতে সাইবার ক্রাইমের শিকার এই মিলেনিয়ালদের মধ্যে ৮০ শতাংশই এই ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন। আবার এদের মধ্যে ১৮ শতাংশ ব্ল্যাকমেলারদের টাকা দিয়েও তাঁদের ব্যক্তিগত ফাইলগুলি বা ডেটা ফেরত পাননি। তবে শুধুমাত্র যে পাসওয়র্ড শেয়ার করেই এই বিপদে পড়ছেন মিলেনিয়ালরা তা কিন্তু নয়।
প্রতিবেশীর ওয়াই-ফাই কানেকশন বা কোনও পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করতে গিয়েও বিপদ ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করার জন্য কোনও থার্ড পার্টি অ্যাপ ফোনে ডাউনলোড করতে বলা হয় বা ফোনে স্টোর করা অন্যান্য ফাইলের অ্যাকসেস চাওয়া হয়। ফ্রি ওয়াই-ফাই ব্যবহারের লোভে অনেকেই সেগুলি করে থাকেন এবং তার জন্য অফ করে দেন ফোন বা ডিভাইসের সিকিউরিটি সফটওয়্যার। আর সেই সুযোগটাই নেয় সাইবার ক্রিমিনালরা।
এই ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় হল কিছু ভাল অভ্যাস মেনে চলা। যেমন, পাসওয়র্ড কখনওই কারও সঙ্গে শেয়ার না করা, ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় অত্যন্ত সতর্ক থাকা যাতে ভুলবশত কোনও পপ-আপ অ্যাড বা অ্যাডাল্ট সাইটের বিজ্ঞাপনে ক্লিক না হয়ে যায়, ফোন বা ডিভাইসে খুব ভাল টোটাল সিকিউরিটি প্যাক ইনস্টল করা এবং পাবলিক ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবহার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা।
ডিজিটাল বাংলাদেশের ইতিবাচক স্লোগানে ও সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে দেশের নাগরিক সেবার যে ডিজিটাল ব্যবস্থা বিদ্যমান তা মোটাদাগে হুমকির মুখে বলে আমরা মনে করি। কাজেই আক্রান্ত হবার আগেই সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঝুঁকি চিহ্নিত করা দরকার এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে চলমান ডিজিটাল সেবা সচল রাখতে সংশ্লিষ্ট সকলে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন বলে আমরা আশা করছি।
No comments