জীবনের কিছু অনন্য অভিজ্ঞতা।
এই লোকটা এরপরেও ক্যাম্পাসে ভিক্ষা করতো। কেউ তার চিকিৎসার অগ্রগতি জানতে চাইলে সে জানাতো যে মেয়েরা তার নামে টাকা তুলে কি করেছে সে জানেনা। তখন আমরা ভয় পেতাম যে আমরা ক্যাম্পাসে গণপিটুনি খেতে পারি। এই অবস্থায় একদিন রিপন আর রাজিব এসে লোকটাকে জানায় যে কুড়াল দিয়ে ওর পা এখনি অপারেশন করে দেওয়া হবে। সেই ভয়ে সে ক্যাম্পাসের বাইরে যেয়ে ভিক্ষা করতো।
২/ মিরপুর ১২ এর এই বাসার কাছে একজন ডাব বেঁচতো। তার মাথায় রোদ তেতে ওঠে দেখে তার জন্যে একটা লাল রঙা ক্যাপ কিনলাম। কিন্তু সে আর আসেনা। একদিন ফোন করে জানলাম যে তার "হাটের ওসুক"। ব্যক্তিগতভাবে দেখা করে একহাজার টাকা দিলাম, আর সিগারেট খেতে বারণ করলাম। সেই থেকে সে আমাকে দিনে পাঁচ-সাতবার ফোন দেয়। অফিসে এবং বাসায় ঢুকে পড়তে চায়। তার আরো পাঁচ হাজার টাকা চাই। তার দুই বৌ মিলে চারটা ছেলেমেয়ে। তার অনেক টাকা দরকার।
৩/একজন বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালা আছেন। তিনদিন অনুপস্থিত দেখে জিজ্ঞেস করে জানলাম যে বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর হয়েছিলো। তিনি জানালেন যে তিনশো টাকায় কচুক্ষেতে ভালো রেইনকোট পাওয়া যায়। তিনশো টাকা দিলাম। সেই থেকে আর কোনো বৃষ্টির দিনে তাকে দেখিনি।
৪/ রাবিতে থার্ড ইয়ারে পড়ার সময়। আমার বন্ধু তারেক ক্যাম্পাসে বেড়াতে এলো। শহীদ মিনারে আড্ডা শেষ হতে মাগরিবের আজান দিয়ে দিলো। সে আমাকে হলে রেখে আসতে চাইলো। আমরা টুকিটাকির পাশ দিয়ে ডানে মোড় নিয়ে রবীন্দ্র ভবনের বিজনেস অনুষদের গেটের সামনে দিয়ে হাটছিলাম। কারো প্রবল ফোপানির শব্দে থমকে দাঁড়ালাম। কালো অন্ধকারের মধ্যে মিশমিশে কালো এক ছেলে কাঁদছে। তার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রু চাঁদের আলোয় ঝলকাচ্ছে। সে চকোলেট বেঁচে। তার আশি টাকা হারিয়ে গেছে। আমরা দুই বন্ধু শেয়ার করে চল্লিশ করে মোট আশি টাকা তাকে দিলাম। দুইদিন পর দেখি সে আইন অনুষদের গেটে বসে দিনের বেলা একই ভঙ্গীতে কাঁদছে। কারন জিজ্ঞেস করলে বলে, "চকলেট বেচি, টাকা হারিয়ে গেছে।" আমি বললাম, "আশি টাকা?" সে বললো, "জি, আশি টাকা!"
৫/ রাজশাহীতে এক ডিসেম্বর মাসের কনকনে সন্ধ্যেয় আমি আর সনি এক বৃদ্ধ ভিক্ষুককে বিশাল বেকারির সামনে ঠকঠক করে কাঁপতে দেখলাম। ওখানে নিক্সন মার্কেটে একশো টাকায় সোয়েটার পাওয়া যায়। টাকাটা দিয়ে সনি এবং আমি দুজনেই অসীম সওয়াবের অধিকারী হওয়ার জন্যে লোভী হয়ে উঠলাম। তারপর সমঝোতায় দুইজনে ভাগাভাগি করে সোয়েটার কেনা হলো এবং চাচা মিয়াকে পরম মমতা ও শ্রদ্ধার সাথে হস্তান্তর করা হলো। আমরা দুজনা তারপর গেলাম বিদ্যুতে। খেয়েদেয়ে আরামে ফিরছি, মাঝে ঘন্টাখানেক পেরিয়েছে। ফেরার পথে দেখি চাচা জায়গা পালটে সেইসসময়ের প্রিতম হোটেলের সামনে এসে একই ভঙ্গিতে কাঁপছে। সোয়েটার উধাও।
No comments