শহজ ভাবে শেখা - সহজ কথা নয় । দরকার কৌশল
রিচার্ড ফাইনম্যান টেকনিক, জটিল বিষয়গুলো কমসময়ে সহজে বুঝে পড়ার টেকনিক”
রিচার্ড ফাইনম্যানকে আমাদের সবার চিনবার কথা। ভদ্রলোক নোবেলবিজয়ী পদার্থবিদ। উনি সবসময় সহজভাবে যেকোন জটিল জিনিস ব্যাখ্যা করতেন। সেই পদ্ধতিটাই ফাইনম্যান টেকনিক। বইয়ের সবচেয়ে জটিল জিনিস, যেটা বুঝতে মাথার বিন্দু বিন্দু ঘাম নাক পর্যন্ত এসে যায় – সেটা কিভাবে সহজে বোঝা যায়?- এটাই এই টেকনিকের বিষয়বস্তু। খুব সোজা , সহজভাবে বুঝলেই সহজ হয়ে যায়! কি উদ্ভট ঠেকছে? ঠেকারই কথা। তাহলে আজকের লেখাটা আপনাদের জন্যই।
একটা প্রবাদ আছে, “যত কাছে থেকে দেখার চেষ্টা করবেন, ততই কম দেখবেন”। আমরা সবাই সবকিছু কাছে থেকে দেখার চেষ্টা করি, এটাই সমস্যা। ফাইনম্যান টেকনিকটাও একটু দূর থেকে দেখার টেকনিক। সহজভাবে বুঝলেই সহজ হয়ে যাওয়ার টেকনিক। স্কট ইয়ং নামের এক কানাডিয়ান ভদ্রলোক, এই টেকনিকটার ব্যাখ্যাদাতা। খুব সম্ভবত পুনর্জন্ম । এমন সময় সবার ক্ষেত্রেই আসে - যে বইয়ের একটা টপিক পুরো পড়ে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। মনে হয়, “মাথার উপর দিয়ে গেল”! এমন পরিস্থিতিতেই এই টেকনিক প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োগ করতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ বিশ মিনিট। এর ধাপ মোট চারটিঃ
#প্রথম ধাপঃ কনসেপ্ট বাছাই।
প্রথমে যে টপিকটা বুঝতে পারছেন না, সেই টপিকটা নির্বাচন করুন। এরপর একটি সাদা কাগজ নিন। সেখানে বড় করে শিরোনাম আকারে উপরে ঐ টপিকটি কয়েক শব্দে লিখুন।
প্রথমে যে টপিকটা বুঝতে পারছেন না, সেই টপিকটা নির্বাচন করুন। এরপর একটি সাদা কাগজ নিন। সেখানে বড় করে শিরোনাম আকারে উপরে ঐ টপিকটি কয়েক শব্দে লিখুন।
#দ্বিতীয় ধাপঃ এমনভাবে আচরণ করুন যে, টপিকটি একজন মূর্খ ছাত্রকে বোঝাচ্ছেন।
বইতে টপিকটি সম্পর্কে যা আছে, তা একটু সংক্ষেপ করে হুবহু খাতায় লিখুন। এরপর এমনভাবে আচরণ করুন যা, আপনার সামনে একজন গন্ডমূর্খ ছাত্র বসে আছে। এবং টপিকটি আপনি ছাত্রকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। এখানে শিক্ষকও আপনি, গণ্ডমূর্খ ছাত্রটিও আপনি। এখানে স্বভাবতই আপনি খুব একটা কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না, আবার আপনিকেই কি বোঝাবেন। তবুও, যতটুকু পারেন একজন খারাপ টিচারের লাইন বাই লাইন করে বোঝাতে শুরু করেন।
বইতে টপিকটি সম্পর্কে যা আছে, তা একটু সংক্ষেপ করে হুবহু খাতায় লিখুন। এরপর এমনভাবে আচরণ করুন যা, আপনার সামনে একজন গন্ডমূর্খ ছাত্র বসে আছে। এবং টপিকটি আপনি ছাত্রকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। এখানে শিক্ষকও আপনি, গণ্ডমূর্খ ছাত্রটিও আপনি। এখানে স্বভাবতই আপনি খুব একটা কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না, আবার আপনিকেই কি বোঝাবেন। তবুও, যতটুকু পারেন একজন খারাপ টিচারের লাইন বাই লাইন করে বোঝাতে শুরু করেন।
#তৃতীয় ধাপঃ যখনই কোন জায়গায় আটকে যাচ্ছেন, সাথে সাথে বই, লেকচার ইত্যাদিতে ফিরে যান।
যেহেতু আপনি খারাপ টিচার, সাথে আপনার ছাত্রও খারাপ। কোন লাইন বাই লাইন বোঝাতে গিয়ে টিচার আটকে যান, অথবা গণ্ডমূর্খ ছাত্রটির(আসলে আপনি)মনে যদি ঐ অংশটুকু নিয়ে সংশয় জাগে – সেটার সমস্যা দূর করতে সাথে সাথে টেক্সটবুক, লেকচারশীট, গাইড ইত্যাদি খুলে ঐ লাইনটুকু বা অংশটুকু আরেকবার পড়ে নিন। তারপর জেনে নিয়ে আবার নিজেই নিজেকে বোঝাতে শুরু করুন।
যেহেতু আপনি খারাপ টিচার, সাথে আপনার ছাত্রও খারাপ। কোন লাইন বাই লাইন বোঝাতে গিয়ে টিচার আটকে যান, অথবা গণ্ডমূর্খ ছাত্রটির(আসলে আপনি)মনে যদি ঐ অংশটুকু নিয়ে সংশয় জাগে – সেটার সমস্যা দূর করতে সাথে সাথে টেক্সটবুক, লেকচারশীট, গাইড ইত্যাদি খুলে ঐ লাইনটুকু বা অংশটুকু আরেকবার পড়ে নিন। তারপর জেনে নিয়ে আবার নিজেই নিজেকে বোঝাতে শুরু করুন।
#চতুর্থ ধাপঃ সিমপ্লিফাই করুন, ছবি, চার্ট ইত্যাদি আঁকুন।
এই পর্যায়ে এসেও আপনি কিন্তু টপিকটা পুরোপুরি বুঝে উঠেননি। তাই বুঝে উঠার জন্যে, প্রথমে যে টপিকটা হুবহু খাতায় লিখেছিলেন, সেখানে দেখুন কোনটা কোনটা জটিল শব্দ আছে। সেগুলোর পাশে ছোট ছোট করে ঐ জিনিসটাকেই বোঝায়, এমন কোন সাধারণ রূপক শব্দ লিখুন। যেমন, ব্যষ্টিক অর্থনীতি শব্দটি লেখা থাকলে, পাশে ছোট করে লিখুন ছোট অর্থনীতি। সামষ্টিক অর্থনীতিকে লিখতে পারেন বড় অর্থনীতি। এভাবে পুরো টপিকটার সব জটিল শব্দগুলো বাদ দিয়ে রূপক শব্দ দিয়ে নতুন করে টপিকের আরেকটি সিমপ্লিফাইড ভার্সন তৈরি করুন। এরপর , প্রয়োজন বুঝে চার্ট, চিত্র ইত্যাদি খাতাতেই আঁকুন। এরপর, আবার সেটাই শিক্ষক হয়ে মূর্খ ছাত্রকে( আসলে নিজেকেই) বোঝানোর চেষ্টা করুন। না বুঝলে তৃতীয় ধাপ থেকে আবার চেষ্টা করুন। এবার দেখবেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই বিষয়টা পুরোপুরি আয়ত্ত্ব হয়ে যাবে।
এই পর্যায়ে এসেও আপনি কিন্তু টপিকটা পুরোপুরি বুঝে উঠেননি। তাই বুঝে উঠার জন্যে, প্রথমে যে টপিকটা হুবহু খাতায় লিখেছিলেন, সেখানে দেখুন কোনটা কোনটা জটিল শব্দ আছে। সেগুলোর পাশে ছোট ছোট করে ঐ জিনিসটাকেই বোঝায়, এমন কোন সাধারণ রূপক শব্দ লিখুন। যেমন, ব্যষ্টিক অর্থনীতি শব্দটি লেখা থাকলে, পাশে ছোট করে লিখুন ছোট অর্থনীতি। সামষ্টিক অর্থনীতিকে লিখতে পারেন বড় অর্থনীতি। এভাবে পুরো টপিকটার সব জটিল শব্দগুলো বাদ দিয়ে রূপক শব্দ দিয়ে নতুন করে টপিকের আরেকটি সিমপ্লিফাইড ভার্সন তৈরি করুন। এরপর , প্রয়োজন বুঝে চার্ট, চিত্র ইত্যাদি খাতাতেই আঁকুন। এরপর, আবার সেটাই শিক্ষক হয়ে মূর্খ ছাত্রকে( আসলে নিজেকেই) বোঝানোর চেষ্টা করুন। না বুঝলে তৃতীয় ধাপ থেকে আবার চেষ্টা করুন। এবার দেখবেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই বিষয়টা পুরোপুরি আয়ত্ত্ব হয়ে যাবে।
দেখা যাবে কয়েক পৃষ্ঠা লিখেই , বিশ মিনিটের মধ্যেই জিনিসটা আপনার পুরোপুরি আয়ত্ত্বে চলে আসবে। ফাইনম্যান ঠিক চতুর্থধাপের এই কাজটাই করতেন। তিনি কখনো কিছু বোঝাতে বা ব্যাখ্যা করতে, জটিল কোন কেতাবি শব্দ ব্যবহার করতেন না। একদম সাধারণ বোধগম্য রূপক কিছু শব্দ দিয়ে জিনিসটা বুঝিয়ে দিতেন। এই টেকনিকটাও একই জিনিস। সহজ জিনিস সহজ ভাবে বোঝার টেকনিক। এটা যদি অভ্যাসে রূপান্তর হয়ে যায়, তাহলে টেকনিকটা প্রয়োগ করতে আরোও কম সময় লাগবে। স্কট ইয়ং ভদ্রলোক পরিচিত এক বছরের মধ্যে এমআইটি’র সিএসই বিভাগের অনার্স করার মধ্য দিয়ে। এছাড়া এক বছরের চারটি ভাষা শিখবার মধ্য দিয়ে। তিনি বলেছেন, এই অসাধারণ টেকনিকটার মাধ্যমেই তিনি এই অসাধ্য সাধন করতে পেরেছেন।
এই টেকনিকটার সবচেয়ে বড় গুণটা হচ্ছে, এভাবে টপিকে কোন জটিল বিষয়বস্তুর বেসিক ফাউন্ডেশনটা ভাল করে বোঝা হয়ে যায়। যেমন কোন জিনিস ব্যখ্যা করতে গিয়ে যদি আরেকটি স্বতঃসিদ্ধ বিষয়বস্তুর সাহায্যে ব্যাখ্যা করা হয় এবং ঐ জিনিসটা যদি আপনার জানা না থাকে, তাহলে আপনি নিজেই নিজেকে বোঝানোর সময় টের পাবেন। তখন, বই-পত্র ঘেঁটে ও বিষয়টি সম্পর্কে জেনে নিয়ে আবার নিজেকে বোঝাতে পারবেন। এভাবে করেঅঙ্কন জটিল টপিক সহজ হয়ে অনেক দিন পর্যন্ত মনে থাকবে। ভাসাভাসা কিছু না শিখে সত্যিকারের মত কিছু শেখা হবে। গতানুগতিক ভাবে যদি ব্যর্থ হন কিংবা সময় বেশি আগে, তাহলে ফাইনম্যান টেকনিক শুরু হোক আজ থেকেই। তো, সাদা কাগজ নিয়ে বসে পড়ুন।
No comments